Unknown Unknown Author
Title: বাজরিগার
Author: Unknown
Rating 5 of 5 Des:
বাজরিগার পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পোষা পাখি। এই পোস্টে বাজরিগার সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হলো। সাধারন নামঃ বাজরীগার (Budgerigar) ...

বাজরিগার পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পোষা পাখি। এই পোস্টে বাজরিগার সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হলো।

সাধারন নামঃ
বাজরীগার (Budgerigar)

বৈজ্ঞানিক নামঃ
মেলোপসিট্টাকাস আনুডুলেটাস (Melopsittacus Undulatus)

আদি নিবাসঃ 
প্যারোট জাতীয় পাখিদের মধ্যে যেসব পাখির শারীরিক গঠন টিয়া পাখির মত এবং লেজ লম্বাটে  হয় সেসব পাখিকে প্যারোকিট প্রজাতির অন্তরভুক্ত করা হয়। বাজরীগার সেই প্যারকিট প্রজাতির পাখি। বাজরিগার প্রধানত অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে বনাঞ্চলের পাখি। 
শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া মেলোপসিট্টাকাস প্রজাতির এই পাখি ১৭০০ শতাব্দিতে তালিকাভূক্ত হয়। বাজরিগার প্রাকৃতিকভাবে সবুজ ও হলুদের সঙ্গে কালো রংয়ের হয়। এছাড়াও থাকে নীল, সাদা, হলুদ রংয়ের ছোপ। সারা গায়ে পেটের নিচে আকাশি, হলুদ বা অন্য রংয়েরও হয়ে থাকে। এই পাখির উপর গবেষণা চালিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীগণ প্রতিপালন শুরু করে সফলতা পায়। জানতে পারেন ঘনঘন ব্রিডিং সম্ভব এই পাখির। একবার যদি বাচ্চা দেওয়া শুরু করে তো আর থামেই না।
অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও তাস্মেনিয়া এবং আশপাশের কয়েকটি দেশেও এই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। বাজরীগার ইঊরোপ পাখি না হলেও ‘জনগোল্ড’ নামক এক শৌখিন পাখি প্রেমিক ১৮৪০ সনে অনেক ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজে করে অষ্ট্রেলিয়া থেকে বেশ কয়েক জোড়া  বন্য বাজরীগার প্রথম  ইংল্যান্ড নিয়ে আসেন। বাজরিগার প্রজনন  বেশ সহজ ও ঘন-ঘন প্রজনন করা যায় বলে কয়েক বছররে মধ্যেই তার মাধ্যমে বাজরীগার সমস্ত ইউরোপ ছড়িয়ে পড়ে। এটির গায়ের রঙ সবুজ হওয়ার কারণে পাখি পালকদের মধ্যে এটি সেরা হইয়ে উঠে। 

বৈচিত্রঃ
বাজরীগার প্যারোকিট প্রজাতির পাখির মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং অত্যান্ত চঞ্চল। বন্য বাজরিগারের রঙ সবুজ হলেও খাঁচায় প্রজনন এর মাধ্যমে অনেক রঙ আসে এর পালকে যেমনঃ সাদা, হলুদ, নীল, বেগুনী, অলিভ, গ্রে, ফিরোজা সহ আর অনেক রঙ।
সাধারণ বাজরীগার থেকেই বিভিন্ন প্রজননকারি (এভিকালচারিষ্ট) তাদের দীর্ঘ গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তির  মাধ্যমে বের করেছেন ক্রেস্টেড বাজরীগার। পরবর্তীতে আর প্রস্থ মাথাওলা এবং শারীরিক আকার দিগুণ করা সহ ইংলিশ বাজরীগার নামে নতুন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটান । 

বাজরিগারের বিভিন্ন নামঃ
আমেরিকায় লিট্টল প্যারাকিট নামে পরিচিত। এছাড়াও এই পাখী বাজী বা শেল প্যারাকিট, ক্যানারী প্যারট, জেব্রা প্যারট, কমন পেট প্যারাকিট, আন্ডুলেটেড প্যারাকিট নামে পরিচিত। আমাদের দেশে বাজরীগার এবং পশ্চিমবঙ্গে বদরী নামেও পরিচিত এই পাখী।

গায়ের রঙ ও বৈচিত্রের কারনেও এদের বিভিন্ন রকম নাম হয়। যেমন; অ্যালবিনো, লুটিনো বাইল, ডিনিসপাই ও ইংলিশ বাজরিগার। অ্যালবিনো সাদা রংয়ের, লুটিনো বাইল হলুদ রংয়ের লাল চোখবিশিষ্ট।

মিউটেশনঃ 
বাজরীগার এর অনেক মিউটেশন আছে যেমনঃ ড্যানিস পাইড, স্পেঞ্জেল, ক্রেস্টেড ইত্যাদি।

শারীরিক বৈশিষ্টঃ
বনে বাস করে এমন বাজরিগার লম্বায় প্রায় ৬.৫ থেকে ৭ ইঞ্চি হতে পারে। তবে খাঁচায় পালা পাখি লম্বায় ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বন্য পাখির ওজন ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম। আর খাঁচায় পালনকারা পাখির ওজন ৩৫ থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।

স্ত্রী ও পুরুষ এবং ছোট বড় চেনার উপায়ঃ
৪ মাস বয়স হলেই নাকের উপরের রং দেখেই সনাক্ত করা হয়। যেমন- পুরুষ পাখির প্রথমে নাকের বর্ণ থাকবে গোলাপি রংয়ের। বয়স বাড়ার সঙ্গে রং হবে নীল। আর স্ত্রী পাখির নাকের বর্ণ হবে সাদা। বয়স বাড়ার সঙ্গে  হবে খয়েরি বা চকলেট। স্ত্রী পুরুষ ভেদে ডাকের পার্থক্য দেখেও নির্ণয় করা সম্ভব।
ছোট বড় চেনার উপায় হচ্ছে প্রধানত চোখ দেখে। ছোট পাখির চোখের আকার হবে বড়। বড় হওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চোখের আকার হবে ছোট। কারণ বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত চোখের বৃত্ত তৈরি হয় না। সেই সঙ্গে নাকের বর্ণ হবে গাঢ়।

আয়ুস্কালঃ 
বনে জঙ্গলে এরা ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। খাঁচাতে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর।

প্রজনন বয়স, ডিম ও বাচ্চাঃ
প্রজনন উপযোগী হতে সময় লাগে চার মাস। তবে চার থেকে আট মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশি। পাখি পালনে যারা বেশি অভিজ্ঞ তাদের মতে আট মাস বয়সের আগে জোড়া তৈরি করা ঠিক না। কম বয়স হলে ডিম-বাচ্চা পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয় না। প্রাথমিক অবস্থায় এরা ৪-৫টি ডিম দেয়। পরে সংখ্যা বেড়ে আট বা তারও বেশি হতে পারে। তবে ১২টি পর্যন্ত ডিম দেওয়ার তথ্য আছে। ডিম থেকে বাচ্চা হতে ১৭-১৮ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো উড়তে সক্ষম হয় ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সে।

লালন পালনঃ
বাজরীগার পাখির জন্য ২ ফিট এর খাঁচা দেওয়া উত্তম। এরা বড় খাঁচা পেলে উড়াউরি করে বেশী যা এদের সাস্থের জন্য খুবই ভাল। ছোট খাঁচা দিলে এরা উড়তে না পাড়ায় একটা সময় খুব চর্বি জমিয়ে ফেলে যার ফলে  বাচ্চা উৎপাদনে এর সমস্যা তৈরি হয় এবং অনেক সময় পাখি হিট-স্টক করে মারা যায়। তাই ব্রিডিং খাঁচা ২ ফিট হওয়া ভালো। 

খাদ্যাভ্যাসঃ
বাজরীগার পাখির সমস্ত খাবার উপকরন পাখির দোকান পাওয়া যায়। খাবারগুলোর নাম হল কাউন, চিনা, তিল, তিশিদানা, পোলাও এর চাউলের ধান, সূর্যমুখী ফুল এর বীজ ইত্যাদি। এর পাশাপাশি এরা সবুজ শাকসবজি যেমনঃ পালংশাক, কলমিশাক, গাজর, বরবটি ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এদেরকে ভেজা পাউওয়া রুটি, ভেজা ছোলা, সিদ্ধ ভুট্টা দিতে হয় বিশেষ করে বাচ্চা ফোটার পর পর। খাঁচার ভিতর যেকোন একটা জায়গায় এক টুকরো সমুদ্রের ফেনা (Cuttle Fish Bone) বেঁধে দিতে হবে।
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় থাকবে চিনা-কাউন সমপরিমাণ। অল্প পরিমাণ সূর্যমুখীর বীজ, তিসি, গুজিতিল, কুসুম ফুলের বীজ ও পোলাওয়ের চালের ধান। অথবা পাখির খাবারের দোকানে সিড মিক্স পাওয়া যায়।
সপ্তাহে তিনদিন কলমি শাক বা পালন শাক দিন। ধান ও কলমি শাক চর্বি কাটাতে ও প্রজননে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে পানি বদলান ভালো। খাবারের অপচয় কমাতে প্রতিদিন না হলেও একদিন পর পর সকাল বেলায় খাবারের তুষ ফেলে দিয়ে নতুন খাবার মিশিয়ে দিতে হবে।
পাখি রেখে বেড়াতে যাবেন কোন সমস্যা নাই। এক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। পানি নষ্ট হবে না এরকম ফিল্টার পদ্ধতি পাবেন পাখি কেনা-বেচার দোকানে। ফুটানো পানি ১০ দিনের বেশি পর্যন্ত চলবে। দাম খুব বেশি নয় প্রতিটি ২০ টাকা।

বিক্রি করার উপযোগী পাখিঃ
৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সি পাখি বিক্রি করা যায়। হাট, দোকান বা ফেইসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করা যায়। পাখির খামার, বাসায় পোষেণ, হাট এমন কোনো জায়গা পরিদর্শন করতে পারেন। এতে আপনার আগ্রহ বাড়বে এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।

ক্রয় ও অন্যান্য বিষয়ে সতর্কতাঃ
শখের বশে যারা বাজরিগার পোষেন তারা এক সময় ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। নিরিবিলি পরিবেষ না পেলে এই পাখি প্রজননে যায় না। চার পাঁচ মাসে প্রাপ্ত বয়স্ক হলেও অনেক সময় ১০-১২ মাস বয়স না হলে প্রজনন শুরু করে না।
স্ত্রী-পুরুষ ঠিক থাকলে ধৈর্য ধরতে হবে। ডিম দিচ্ছে না বলে বার বার পাখি বদল করা যাবে না। তবে কেনার সময় খুবই সচেতন থাকতে হবে। প্রথমে চোখের বৃত্ত দেখে বুঝে নিতে পারেন। তবে বিক্রেতারা খুবই চতুর। তাই মুখের কথায় বিশ্বাস না করে নিজে নিজে নির্বাচন করতে পারলে ভালো। তাছাড়া যারা এই ব্যাপারে বেশি অভিজ্ঞ তাদের সঙ্গে নিয়ে দেখতে খুব সুন্দর ও রোগমুক্ত পাখি কেনা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
যারা বাণিজ্যিকভাবে পালন করেন বা করবেন তাদের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে যত্ন নিতে হবে। কারণ এতে খরচ কম হবে। যদি পাখির ওজন বেড়ে যায় তবে পোলাওয়ের ধান খাওয়ালে খরচ বেশি হবে।
যত্নে থাকলে এই পাখির অসুখ হয় না বললেই চলে। তাছাড়া আজকাল ফেইসবুকে সমস্ত বিষয়ে অভিজ্ঞদের (বিশেষ করে বাজরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশ) কাছ থেকে সহযোগিতা পাবেন।

প্রজনন এবং রোগ নিয়ে আলোচনা অন্য পোস্টে পাবেন।

Advertisement

Post a Comment

 
Top