যারা গরমে কিভাবে বাজেরিগারের যত্ন নিবেন সে ব্যপারে এখনো ধারনা পাচ্ছেন না, তাদের কিছুটা ধারনা দেবার চেষ্টা করবো এই পোস্টের মাধ্যমে।
ধরা যাক প্রচণ্ড গরম পড়ছে, পাখির আশেপাশের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রী
সেলসিয়াস ও অতিক্রম করছে। এই অবস্থায় নীচের সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা যেতে পারেঃ
- যেসব বারান্দায় সারাক্ষন রোদ পড়ে সেখান থেকে পাখি সরিয়ে ফেলা উচিত।
- প্রতিদিন গোসলের পানি দিলে পাখি গোসল করে নিবে।
- মাল্টিভিটামিন ব্যাবহারে সতর্ক থাকবেন। হিপ্রাচক/ম্যাক্সিফোরট/ভাইটারেড বাদ দিয়ে স্ট্রেসকিল পাউডার জাতীয় মাল্টিভিটামিন ব্যাবহার করবেন। এগুলিতে কিছু প্রয়োজনীয় লবন থাকে যা পাখিকে সচল রাখে অতিরিক্ত গরমে।
- নরম খাবার/শাকসব্জী অবশ্যই ২ ঘন্টার বেশী রাখবেন না। এগফুড কোনভাবেই সপ্তাহে ১ দিনের বেশী দিবেন না। ভেজানো গম, সেদ্ধ বুটের ডাল দেয়া যাবে সপ্তাহে ২ দিন। সীডমিক্সে তেলবীজ ৫% এর বেশী রাখবেন না। চীনা ২০% এর বেশী দিবেন না। কাউন/রেড মিলেট/সাদা মিলেট/ক্যানারি মিশিয়ে ব্যাবহার করবেন।
- শারীরিক অসুস্থতা/পায়খানার সমস্যা দেখা দিলেই মাল্টিভিটামিন/নরম খাবার বন্ধ করে দিবেন।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে (২৫-২৮) আনতে না পারলে ব্রীডিং করাবেন না।
- প্রতিদিন অবশ্যই খাবার পানি পালটে দিবেন।
- প্রতি দুইদিনে একবার ট্রে পরিষ্কার করবেন।
- সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ইলেক্ট্রোমিন/ গ্লুকোলাইট/ওরস্যালাইন দিবেন যাতে পাখির ক্লান্তি না আসে।
- এলোভেরা সপ্তাহে ৩ দিন দেয়া গেলে কোন মাল্টিভিটামিন/স্যালাইন দেয়ার দরকার হবে না। সরাসরি দেয়া যাবে অথবা সবুজ অংশ ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বোতলে করে ডীপফ্রিজে রেখে ব্যাবহার করা যাবে ১:১ পানিতে মিশিয়ে। নরম খাবারেও চটকে দেয়া যাবে।
যদিও
বাজেরিগার অনেক স্পর্শকাতর একটি পাখি। তারা অনেক প্রকৃতিতে রুক্ষ আবহাওয়ায়
টিকে থাকতে পারে কিন্তু আমাদের দেশে আবহাওয়া অনেক দ্রুত পরিবর্তন হয়, যা
বাজেরিগারের শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই কারনে শীতের শুরুতে এবং
গরমের শুরুতে অনেক সময় পাখি মারা যায়। কারন এই পরিবর্তন দ্রুত হওয়াতে আমরা
অনেক সময় প্রস্তুতি নিতে পারিনা বা অবহেলা করি। গরমকালে সবচেয়ে বেশি যে
সমস্যা দেখা যায় সেটা হল হিট স্ট্রোক। যা পাখি মারা যাবার অন্যতম কারন।
তাই এই পরিবর্তিত আবহাওয়ার সাথে আপনার পাখিদের মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারেন পাখির আশেপাশের পরিবেশ আর খাবারে পরিবর্তন এনে।
পরিবেশ:
বাজেরিগারের জন্য সহনীয় তাপমাত্রা হল ১৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই পাখিদের ঘরের তাপমাত্রা এর কম বা বেশি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাজেরিগারের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাখিদের এমন স্থানে রাখতে হবে যেখানে বাতাস চলাচল করে। মনে রাখতে হবে বাতাস যেন সরাসরি পাখিদের গায়ে না লাগে। কারন সরাসরি বাতাস লাগলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। সূর্যের তাপ সরাসরি লাগে এমন জায়গায় পাখি রাখবেন না। যারা বদ্ধ ঘরে পাখি পালেন তারা অবশ্যই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা নিবেন। যেমন এক্সহাস্ট ফ্যান লাগানো। খাঁচা থেকে দূরে একটা টেবিল ফ্যান চালানো যাতে বাতাস স্থির হয়ে না যায়।
খাবার:
আমরা শীতকালে পাখিদের তেলজাতীয় খাবার দিতে বলি। গরমকালে ঠিক তার উল্টোটা করতে হবে। চিনা-কাউনের সাথে যেসব তেলজাতীয় দানা দেয়া হত তা একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। নিয়মিত পাখিদের শাকসবজি খেতে দিতে হবে কারন শাকসবজি পাখিদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। যারা প্রতিদিন এগফুড খাওয়ান তারা পরিমান কমিয়ে দিন বা এক দিন পর পর দিন। সপ্তাহে ২ দিন ডাবের পানি খাওয়াতে পারেন।
গোসল:
গরমকালে পাখিদের গোসল খুব দরকারী একটি বিষয়। প্রতিদিন বেলা ১২ টার সময় একটি ছড়ানো বাটিতে গোসলের পানি দিন। অনেক পাখি নিজে থেকে গোসল করবে, কিন্তু কিছু কিছু গোসল নাও করতে পারে। যারা গোসল করবেনা তাদের গায়ে পানি স্প্রে করে দিতে হবে সপ্তাহে ২-৩ দিন। পানি স্প্রে করার সময় যেন তাদের নাকে পানি না যায় যেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই গায়ে সরাসরি স্প্রে না করে উপরের দিকে স্প্রে করবেন।
পাখিরা ঘাসের উপর জমে থাকা শিশিরের উপর গড়াগড়ি খেতে পছন্দ করে। দেখা যায় আপনি যখন কোন শাক ধুয়ে তাদের খেতে দেন তখন তারা তার উপর গড়াগড়ি খায়। এমন যদি দেখতে পান তাহলে শাকের গায়ে বেশি করে পানি লাগিয়ে খাঁচায় দিন অথবা গোসলের বাটিতে কিছু শাক দিয়ে দিন। তারা খুব মজা করে খাবে এবং গোসল করবে।
Post a Comment